নয়া আলো ডেস্কঃ- সড়কের পশ্চিম পাশে মূল সড়ক থেকে ৫-৬ হাত দূরে মায়ের কোলে ছিল তামিমা আক্তার তন্বী (৫)। সড়কের ওপারে যে নানার মুদিখানার দোকান। সেখান থেকে বিস্কুট কিনে খাবে সে। মেয়েকে নিয়ে সড়ক পার হতেই সেখানে দাঁড়িয়ে ছিলেন তামিমা আক্তার তন্বীর মা শিমুল আক্তার। কিন্তু ওই দোকানে আর যাওয়া হলো না তাঁদের। সড়ক থেকে কয়েক হাত দূরে দাঁড়িয়ে থাকার পরও সেখানে তাঁদের চাপা দেয় বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট করপোরেশনের (বিআরটিসি) একটি গাড়ী। ঘটনাস্থলেই মারা যায় তন্বী। আর আহত হয়ে মা শিমুল আক্তার এখন হাসপাতালে। তাঁর অবস্থাও আশঙ্কাজনক।
বুধবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে এমন মর্মান্তিক দুর্ঘটনাটি ঘটেছে খুলনা নগরের খালিশপুর থানার বিআইডিসি সড়কের নূরনীয়া মসজিদ এলাকায়। তামিমার বাবার নাম মো. দুলাল শেখ। তিনি ওই এলাকার প্লাটিনাম জুট মিলের একজন শ্রমিক। দুই ভাই বোনের মধ্যে ছোট তামিমা। পড়ে ওই এলাকার দারুল কোরআন মাদ্রাসার শিশু শ্রেণিতে।
এ ঘটনার পর পর এলাকাবাসী রাস্তার যান চলাচল বন্ধ করে দেয়। উত্তেজিত এলাকাবাসী একই সড়ক দিয়ে যাওয়া বিআরটিসির (শীতাতপ) ঢাকাগামী অপর একটি বাস ভাঙচুর করে।
নিহত তন্বীর মামা মোঃ কামাল জানান, তার বোন শিমুল আক্তার হাসপাতালের তিন তলায় ১১-১২নং ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন রয়েছে। আর তার ভাগ্নী তন্বীর আসর বাদ নূরানীয়া জামে মসজিদে নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজার নামাজ শেষে গোয়ালখালী কবরস্থানে তার লাশ দাফন করা হয়।
তামিমাদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, মেয়েকে হারিয়ে বিলাপ করছেন বাবা দুলাল শেখ। আত্নীয়-স্বজন ও স্থানীয়রা তাঁকে সান্ত্বনা দিচ্ছেন। কিন্তু কিছুতেই তাঁর মন মানছে না। বারবার ডুকরে কেঁদে উঠছেন।
দুলাল শেখ বলেন, সকালে উঠে মুখ ধুয়ে পরোয়াটা খেতে চেয়েছিল তামিমা। কিন্তু তিনি পরে পরোটা এনে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে আগে বিস্কুট খেয়ে পড়াশুনা করার কথা বলেন। বিস্কুট খুব পছন্দ করতো তামিমা। প্রায় প্রতিদিনই পাশে থাকা নানার দোকান থেকে বিস্কুট কিনে খেত। গতকালও সেখানেই মায়ের সঙ্গে যাচ্ছিল সে।
বিলাপ করতে করতে তিনি বলেন, ‘খুবই শান্ত প্রকৃতির ছিল তামিমা। আল্লাহ কেন এই নিষ্পাপ মেয়েটাকে নিয়ে গেল!’
তামিমাদের বাড়ির সামনেই ঘটনাস্থল। স্থানটি একটি লাল রংয়ের চাদর দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে। দেখা যায়, মূল সড়ক থেকে ওই স্থানের দূরত্ব কমপক্ষে ৫ থেকে ৬ হাত। গাড়ীটি যে দিকে যাচ্ছিল ঘটনাস্থল তার বিপরীত দিকে। নিজের পাশ থেকে বিপরীত পাশের ফুটপাতে গিয়ে চাপা দেওয়াটা সত্যিই বিস্ময়কর।
স্থানীয়রা জানান, দুর্ঘটনায় তামিমার মাথার খুলি চ্যাপ্টা হয়ে গেছে। মাথা থেকে ঘিলু বেরিয়ে গেছে। চাঁদর দিয়ে সেটা ঢেকে রাখা হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও ওই এলাকায় থাকা বিআরটিসি’র টিকিট কাউন্টার সূত্রে জানা গেছে, ওই সময় পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ার দিকে যাচ্ছিল বিআরটিসি’র একটি গাড়ী। গাড়ীটি একটি ইজিবাইককে ওভারটেক করতে গিয়ে বিপরীত পাশে চলে যায়। এ সময় সড়ক থেকে অনেক দূরে থাকার পরও তামিমাদের চাপা দেয় গাড়ীটি। ধাক্কায় তামিমা ছিটকে পড়লে পিছনের চাকায় সে পিষ্ট হয়। আর তামিমার মায়ের পায়ের ওপর দিয়ে চাকা চলে যায়। ঘটনাস্থলেই নিহত হয় তামিমা। শিমুল আক্তারকে স্থানীয়রা উদ্ধার করে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, বিআইডিসি সড়কের ওই এলাকাটিতে শ্রমিকদের বসতি। পাশের কয়েকটি পাটকলের শ্রমিকরা থাকেন ওই এলাকায়। এ কারণে এলাকাটিতে সব সময় থাকে মানুষের কর্মতৎপরতা। কিন্তু ওই সড়ক দিয়ে যেসব গাড়ী প্রতিনিয়ত চলাচল করে তা যায় খুব দ্রুত গতিতে। অধিকাংশ সময় মূল চালকরা শহরে থেকে সহকারীকে দিয়ে গাড়ী চালিয়ে শহর পযন্ত নিয়ে যান। সেখান থেকে দায়িত্ব নেন চালকরা। বিআইডিসি সড়কে চালকের সহকারীরা গাড়ী চালানোর ফলে ওই এলাকায় মাঝে মাঝেই দুর্ঘটনা ঘটে। গত কয়েক মাস আগেও সড়ক দুর্ঘটনায় এক যুবক মারা যান বলে জানান তাঁরা।
খালিশপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোশাররফ হোসেন বলেন, লাশ ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। লাশ দাফনের পর পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা করা হবে বলে শুনেছি। চালকের পরিচয় জানা গেছে। মামলা হওয়ার পর চালককে গ্রেপ্তারের চেষ্টা করা হবে।