২৯শে সেপ্টেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার, ১৪ই আশ্বিন, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ১৩ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

শিরোনামঃ-




প্রশিক্ষণ না দিলেও কম্পিটারের দোকানে মিলে সনদ

মাসুদ রানা রাব্বানী, রাজশাহী, করেসপন্ডেন্ট।

আপডেট টাইম : আগস্ট ০২ ২০২৩, ২০:৪৬ | 667 বার পঠিত | প্রিন্ট / ইপেপার প্রিন্ট / ইপেপার

রাজশাহী অঞ্চলে বেড়েছে বিদেশগামী প্রবাসীর সংখ্যা। বিগত দিনের চেয়ে বর্তমান বিদেশগামী প্রবাসীর হার অনেকটাই বেশি। কিন্তু রাজশাহী জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসে কাজ নিয়ে এসে বিদেশগামী প্রবাসীদের পদে পদে ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে। মূলত দালালের খপ্পড়ে পড়ে অতিরিক্ত টাকা গুনতে হচ্ছে বিদেশগামী প্রবাসীদের।
রাজশাহী জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিস সূত্রে জানা গেছে, ২০২২ সালের জুলাই থেকে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত রাজশাহী, নাটোর ও নওগাঁ এই তিন জেলা থেকে ১৮ হাজার ৫৮৬ জন প্রবাসী বিদেশ গেছে। যা গত গত অর্থবছর এর পরিমান ছিল কম। এবার রাজশাহী থেকে বিভিন্ন দেশে গেছে ২ হাজার ৭৮৮ জন, নাটোর থেকে ৪ হাজার ৬৪৬ জন ও নওগাঁ থেকে ১১ হাজার ১৫১ জন। মূলত রাজশাহী জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিস এই তিন জেলা নিয়ে কাজ করেন।
জানা গেছে, বিদেশগামীদের জন্য ‘আমি প্রবাসী’ নামে একটি এ্যাপসের মাধ্যমে প্রথমে ট্রেনিংয়ে জন্য ভর্তি হতে হয়। ভর্তি হতে গেলে তার জাতীয় ভোটার আইডি কার্ড, পাসপোর্টসহ যাবতীয় কাগজপত্রের প্রয়োজন পড়ে। প্রথমত একজন কর্মীকে ব্যুরো অব ম্যানপাওয়ার ইমপ্লয়ার এন্ড ট্রেনিংয়ের (বিএমইটি) নিবন্ধন করতে হয়। এক্ষেত্রে একজন কর্মীকে ভর্তি হতে টাকা লাগে, যেমন- বিএমইটি বা নিবন্ধর করতে সর্বোচ্চ ৫শ’ টাকা, ব্যাংক ড্রাফ এক হাজার টাকা, ফিঙ্গার প্রিন্টে ২২০। এরপর তিনদিনের প্রশিক্ষণ শেষে দেয়া হয় সনদপত্র।
দেখা গেছে, একজন প্রবাসীকে বিএমইটি নিতেই দিতে হয় ১০ হাজারের বেশি টাকা। আবার তিন দিনের ট্রেনিং না করেই টাকা হলে বাইরের কম্পিউটারের দোকানে মিলে সনদপত্র। যাদের ২০২০ সালের পাসপোর্ট রয়েছে তাদের বিড়াম্বনার শেষ নাই। এনালগ পদ্ধতি বাতিল হওয়ায় ২০২০ সালের পাসপোর্ট ধারীরা সার্ভার বন্ধ থাকায় বিকাশে টাকা দিতে পারছেন না। যার কারণে তাদের বিএমইটিও হচ্ছে না। কিন্তু তাদেরও ভর্তি বা বিএমইটি থেমে নেই।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, একজন প্রবাসীকে ভর্তি হতে রাজশাহী জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসে গিয়ে কাগজপত্র জমা দেয়ার পর সেখান থেকে পাঠিয়ে দেয়া হয় বাইরের কম্পিউটারে। বাইরের কম্পিউটারের দোকানে অনলাইনের মাধ্যমে যাবতীয় কাজ করতে হয়। তবে বাইরের কম্পিউটারের দোকানদার এসব প্রবাসীদের ফরম পূরণ বা বিএমইটি দিতে নেয় গলাকাটা ফি। যেখানে ৫শ’ টাকা লাগার কথা সেখানে আদায় করা হয় সাড়ে ৭শ’ থেকে ৮শ’ টাকা। বিশেষ করে কাগজপত্র একটু ভুল হলে কমপিউটারের দোকানদারদের ঈদ লেগে যায়। কাগজপত্র ঠিক করে দেয়ার নামে নেয়া হয় অতিরিক্ত টাকা। খোদ অফিস থেকেই প্রবাসীদের জানিয়ে দেয় হয় কোন কম্পিউটারে কাজ করতে হবে। এক্ষেত্রে আবার একটি টোকেন ব্যবহার করা হয়।
জানা গেছে, টিটিসির সামনে ও প্রধান রাস্তার পূর্ব পাশে রয়েছে বেশ কয়েকটি কম্পিউটারের দোকান। এরমধ্যে একটি মা কম্পিউটারের দোকান। কোনো দোকানে কাজ না থাকলে মা কম্পিউটারের দোকানে চরম ভীড় দেখা যায়। অফিসের দালাল শ্রেণির কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারীরা চিরকুট লিখে মা কম্পিউটারের দোকানে প্রবাসীদের পাঠিয়ে দেন বিএমইটিসহ সকল কাজের জন্য। প্রবাসীরা এই কম্পিউটারের দোকানে গেলে সব কাজেই নেয়া হয় অতিরিক্ত টাকা। আর এই টাকার ভাগ পায় কাজ পাঠানো কর্মচারীরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এমন কোনো কাজ নেই যে মা কম্পিউটারে হয় না। সেটা বৈধ অবৈধ যেটাই হোক। মা কম্পিউটারের দোকানদার মৃদুল নিজেও একজন দালাল। তিনি বেশিরভাগ সময় জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসের মধ্যে থাকেন। বিদেশগামী লোকজনদের অল্প টাকায় কাজ করে দেয়ার নামে তার দোকানে নিয়ে গলাকাটা ফি আদায় করেন। মা কম্পিউটারে বন্ধ থাকা সার্ভারের কাজ করা হয়। ২০২৩ সালে এনালগ সিস্টেম বন্ধ হয়ে গেছে। সার্ভার রয়েছে বন্ধ। তারপরও মা কমপিউটারে মালিক মৃদুল ২০২০ সালের বিদেশগামীদের বিএমইটি দেন। এক্ষেত্রে তিনি নেন ৩৫শ’ টাকা থেকে ৪৫শ’। আবার প্রশিক্ষণ না দিলেও এই কম্পিউটার মালিক দেন সনদ। ক্ষেত্রে একজন প্রবাসীকে গুনতে হয় ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা। যদিও মা কম্পিউটারের মালিক মৃদুল বিষয়টি স্বীকার করেছেন। কিন্তু সেটি ঢাকা থেকে করিয়ে নেন বলেও জানান।
সৌদিগামী নাটোরের মাসুদুল ইসলাম। তার পাসপোর্ট করা ২০২০ সালে। তিনি এখন সৌদি যাবেন। তিনি বিএমইটি করে ভর্তি হতে এসেছেন রাজশাহী জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসে। কিন্তু তার সার্ভার বন্ধ। ২৭০ টাকা টাকা বিকাসে দিয়ে বিএমইটি তুলে ভর্তি হতে হবে। এরই মধ্যে দেখা হয় মা কমপিউটারের মৃদুলের সাথে। তিনি সব করে দিবেন বলে ডেকে তার দোকানে আনেন। সেখানে তাকে বিএমইটি করে দেয়ার কথা বলে ৪৫শ’ টাকা চান। তিনি রাজি হন। পরে তাকে জানানো হয় তার তিন দিনের প্রশিক্ষণও দিতে হবে না। তিনি প্রশিক্ষণ না দিয়েই সনদ দিবেন। এতে তাকে দিতে হবে ১১ হাজার টাকা। তিনি রাজি হন। তিনি মৃদুলের চাহিদার টাকা দেন এবং তাকে বিএমইটি ভর্তি নিবন্ধন ও ভর্তির পর যে সনদ দেয়া হয় সেটি তাকে দেন।
নওগাঁ থেকে আসা জহিরুল ইসলাম জানান, রাজশাহী জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসে ঢুকতেই মা কমপিউটারের দোকানদার মৃদুল তাকে ধরেন। সব কাজ করে দিবে বলে দোকানে নিয়ে আসে। বিএমইটি তোলা ভর্তি হওয়া, প্রশিক্ষণ না দিয়েই সনদ সব মিলে তার কাছে ১৭ হাজার টাকা দাবি করেন। সর্বশেষ ১৫ হাজারে রাজি হন। ঝুট ঝামেলা এড়াতে তিনি দালাল মৃদুলকে দিয়ে কাজ করে নেন।
এব্যাপারে কৌশলে মোবাইল ফোনে কথা বলা হয় মা কম্পিউটারের দোকানদার মৃদুলের সাথে। তিনি বলেন, আমি সব কাজ করে দিতে পারি। সব কাজ কিভাবে সম্ভব জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার লোক আছে। যে সালেরই বিএমইটি বা প্রশিক্ষণ সনদ হোক আমি করে দিতে পারি। আর এগুলো একটু বেশি টাকা দিলে করে দেয়া যায়।
এব্যাপারে রাজশাহী জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসের সহকারী পরিচালক আব্দুল হান্নান জানান, এগুলো বাইরে হয়। যার কারণে আমাদের কিছু করার থাকে না। তিনি বলেন, তারপরও বিষয়টি খোঁজ নিয়ে প্রশাসনের সহযোগিতা নিয়ে এসব কম্পিউটারের দোকানদারবের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবো।

 

Please follow and like us:

সর্বশেষ খবর

এ বিভাগের আরও খবর

প্রধান সম্পাদক- খোরশেদ আলম চৌধুরী, সম্পাদক- আশরাফুল ইসলাম জয়,  উপদেষ্টা সম্পাদক- নজরুল ইসলাম চৌধুরী।

প্রধান সম্পাদক কর্তৃক  প্রচারিত ও প্রকাশিত

ঢাকা অফিস : রোড # ১৩, নিকুঞ্জ - ২, খিলক্ষেত, ঢাকা-১২২৯,

সম্পাদক - ০১৫২১৩৬৯৭২৭,০১৬০১৯২০৭১৩

Email-dailynayaalo@gmail.com নিউজ রুম।

Email-Cvnayaalo@gmail.com সিভি জমা।

 

 

সাইট উন্নয়নেঃ ICTSYLHET