দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে মাদিলাহাট কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ প্রভাবশালী আওয়ামীলীগ নেতা মোঃ মোস্তাফিজুর রহমানের বিরুদ্ধে ভূয়া নিয়োগপত্র দেয়া ও কলেজে চাকুরি দেয়ার প্রলোভন দিয়ে একাধিক ব্যক্তির নিকট থেকে অর্ধ-কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
গত ৫ আগষ্ট সরকার পরিবর্তন হওয়ায়,ওই অধ্যক্ষ সভাপতির নিকট পদত্যাগ করে গাঁ ঢাঁকা দেয়ায় এখন অভিযোগ নিয়ে প্রশাসনের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন ভুক্তভোগীরা। এ ঘটনায় ভুক্তভোগীরা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিকট লিখিত অভিযোগ করায়, তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার মীর মোঃ আল কামাহ তমাল।
অভিযোগ সুত্রে জানা গেছে জনৈক মোঃ শাহিন, মোছাঃ লাবনী আকতার, মোছাঃ শাহিনা বেগম নামের তিন চাকরি প্রত্যাশীকে ভূয়া নিয়োগ দিয়ে প্রায় ৪০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন ওই অধ্যক্ষ। নিয়োগপত্র হাতে পাওয়ার পর তারা জানতে পারেন ওই পদে অনেক পুর্বেই নিয়োগ দেয়া আছে অন্য ব্যক্তিদের,এখন সহায় সম্বল হারিয়ে ভুক্তভোগী ওই তিন চাকুরী প্রত্যাশী ফুলবাড়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও ফুলবাড়ী থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, কলেজের অধ্যক্ষ শূন্য পদ দেখিয়ে ল্যাব সহকারী পদে লাবনী আকতারের নিকট ১০লাখ টাকা, অফিস সহায়ক পদে শাহিনা বেগমের নিকট ১৫লক্ষ ৫০হাজার টাকা এবং নিরাপত্তা কর্মী পদে শাহিনের নিকট থেকে ১৩লাখ টাকা নিয়েছেন।
ভুক্তভোগীরা জানায় নিয়ম মাফিক নিয়োগ দেয়ার নামে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেয়া হয়। সেখানে তারা উক্ত পদের জন্য প্রার্থী হিসেবে আবেদন করেন। অধ্যক্ষ নিয়োগ প্রক্রিয়া যথারীতি শেষ করেন,পরবর্তীতে বিলের জন্য আবেদন করতে গেলে পরিচালকের কার্যালয় সুত্রে জানতে পারেন ওই পদে অনেক পূর্বেই নিয়োগ দেয়া আছে অন্য ব্যক্তিদের।
চাকুরীর প্রত্যাশী ভুক্তভোগীরা জানায়,নিজেদের সবকিছু শেষ করেই অধ্যক্ষের চাহিদা মতো টাকা দেন তারা, কিন্তু পরবর্তীতে বিল-বেতন না হলে কারণ হিসেবে জানতে পারেন ওই পদগুলোতে আগে থেকেই লোক নিয়োগ দেয়া আছে। তারা জানায় বেকার হওয়ায় চাকুরীর প্রত্যাশায় অধ্যক্ষের দাবি মেনে তাকে পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন মানুষের উপস্থিতিতে নগদ টাকা প্রদান করেন। এখানেই শেষ নয়, হযরত আলী নামে এক যুবককে ভূয়া নিয়োগপত্র দিয়ে সেই নিয়োগ পত্রের আলোকে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করে নিয়ে ১৩ লাখ টাকা নিয়েছেন সাবেক ওই অধ্যক্ষ মোস্তাফিজুর রহমান। কলেজ সুত্রে জানা গেছে হযরত আলীর নামে কোন জিবি(গর্ভনিং বডি) বোর্ড ও নিয়োগ বোর্ড বা রেজুলেশন কিছুই করেননি, অথচ ভূয়া নিয়োগপত্র দিয়ে তার নিকট থেকে এই টাকা আত্মসাৎ করেন।
ভূক্তভোগী ও স্থানীয়রা জানায়,সাবেক সংসদ সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী এ্যাডভোকেট মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার এমপির ছোট ভাই উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মুশফিকুর রহমান বাবুলের সহযোগীতায় সাবেক ওই অধ্যক্ষ মোস্তাফিজুর রহমান মাদিলা হাট কলেজে চাকুরী দেয়ার নাম করে প্রায় কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। সংসদ সদস্য ও সংসদ সদস্যের ছোট ভাই উপজেলা আওয়ামীলীগের প্রভাবশালী নেতা উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মুশফিকুর রহমান বাবুলের আস্থাভাজন হওয়ায় ওই অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে কেউ কথা বলার সাহস পায়নি । গত ৫আগষ্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর পাওনা দারেরা তাকে খুজতে শুরু করলে, বেগতিক দেখে সু-কৌশলে কলেজের অধ্যক্ষ পদ থেকে অব্যাহতি নিয়ে গাঁ ঢাঁকা দেয় ওই অধ্যক্ষ।
এদিকে এলাকাবাসীরা অভিযোগ করে বলেন, গত ৫ আগষ্টের পূর্বে যে যে বিএনপি নেতা-কর্মিরা সাবেক সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান ফিজারের ছোট ভাই উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মুশফিকুর রহমান বাবুলের সাথে গোপনে আতাত করে চলেছে এবং গত উপজেলা নির্বাচনে মুশফিকুর রহমান বাবুলের পক্ষে প্রকাশ্যে নির্বাচনে প্রচারণা চালিয়েছে, ওই বিএনপি নেতা-কর্মিরা এখনো মুশফিকুর রহমান বাবুলের পরামর্শে সাবেক অধ্যক্ষের পক্ষ নিয়ে ভুক্তভোগীদের এবং পাওনাদার এলাকাবাসীদের হুমকি দিচ্ছে। এতে করে নিরাপত্তা হীনতায় ভুগছে এলাকাবাসীসহ ভুক্তভোগী পরিবার গুলো। তবে উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোস্তাক আহম্মেদ চৌধুরী খোকন বলেন, যারা দুর্নীতিবাজ আওয়ামীলীগের নেতা-কর্মিদের পক্ষ নিয়ে কোন প্রকার পদক্ষেপ নিবে তাদের সাথে বিএনপির কোন সম্পৃক্ততা নেই,তাদেরকে আইনের হাতে তুলে দেয়ার পরামর্শ দেন এই বিএনপি নেতা। তিনি বলেন দুর্নীতিবাজদের সহযোগীতা করলে ওই নেতা-কর্মিদের বিরুদ্ধেই সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে ।
মাদিলা হাট কলেজের পরিচালনা কমিটির সাবেক ও বর্তমান একাধিক অভিভাবক ও জিবি বোর্ডের সদস্যরা জানায় এর পূর্বেও টাকা আত্মসাতের দায়ে ওই অধ্যক্ষ মোস্তাফিজুর রহমানকে গর্ভনিং বডি (জিবি) সাময়িক বরখাস্ত করেছিলেন। পরবর্তীতে ওই অধ্যক্ষ কোর্টে মামলা করলে বিজ্ঞ আদালত তাঁর সাময়িক বরখাস্ত বৈধ ঘোষনা করেন। কিস্তু আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর সাবেক এমপি ও মন্ত্রী এ্যাডঃ মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার আদালতের রায়ের তোয়াক্কা না করেই, ওই অধ্যক্ষকে পুনরায় মাদিলাহাট কলেজের অধ্যক্ষ পদে বসিয়ে দেন। এর পরেই শুরু হয় তাঁর নিয়োগ বানিজ্যসহ টাকা আত্মসাতের মহোৎসব।
ভুক্তভোগী চাকরি প্রত্যাশীরা বলেন, চাকুরী দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে তিনি তাদের কাছ থেকে সুকৌশলে টাকা নেন। কিন্তু চাকরি না হওয়ায়, তার কাছে থেকে টাকা ফেরত চাইলেও তিনি এখন পর্যন্ত কাউকে টাকা ফেরত দেননি। তিনি এখন পদত্যাগ করে গাঁ ঢাকা দিয়েছেন, এমনকি তার বাড়িতে গেলেও তাকে পাওয়া যাচ্ছে না। তাই বাধ্য হয়েই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন। এ বিষয়ে সাবেক অধ্যক্ষ মোস্তাফিজুর রহমানের সাথে ফোনে যোগাযোগ করা হলে, তিনি কলেজের বিষয়ে কোন মন্তব্য করবেন না বলে জানান।
এবিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মীর মোঃ আল কামাহ্ তমাল বলেন, চাকরি দেওয়ার নামে মাদিলাহাট কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ মোস্তাফিজুর রহমানের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ পাওয়া গেছে, সেই অভিযোগের ভিত্তিতে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে তদন্ত করা হচ্ছে, তদন্ত শেষ হলেই আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে তিনি জানান।