নার্সিং কাউন্সিলের রেজিস্ট্রার হালিমা ও ডেপুটি রেজিস্ট্রার নিলুফা ইয়াসমিনের বিরুদ্ধে রাজশাহীতে লক্ষ লক্ষ টাকার পরিক্ষা কেন্দ্র বানিজ্যের অভিযোগ উঠেছে।
নির্ভর যোগ্য সূত্রে জানা গেছে, নার্সিং কাউন্সিলের রেজিস্টার হালিমা ও ডেপুটি রেজিস্ট্রার নিলুফা ইয়াসমিন, তারা পরীক্ষার জন্য কিছু প্রতিষ্ঠানে ছাত্র/ছাত্রী জন প্রতি ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা গ্রহণ করেন। পরবর্তীতে নিজেদের ইচ্ছামতো পরীক্ষার কেন্দ্র ঠিক করেন। ওই সকল কেন্দ্রে তারা ছাত্র/ছাত্রীদের পরীক্ষা সুবিধা প্রদান করেন। এমসিকিউ করে দেয়া, অবাধে নকল করার সুবিধা দেওয়া-সহ মৌখিক পরীক্ষায় (ভাইভা) পাস করে দেয়ার অভিযোগও রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। আর এই পদ্ধতির মাধ্যমে বাড়ছে মেধা জ্ঞানহীন (লন্ড-ভন্ড) ডিপ্লোমা নার্সিং পাশ ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা। পাশ করা ছাত্র-ছাত্রীরা রাজশাহী মহানগরীসহ জেলা ও উপজেলার বিভিন্ন ক্লিনিক ও ডায়াগনিষ্ট সেন্টারে চাকরি করছেন। এ নিয়ে রাজশাহীর সচেতন মহল ও সুশিল সমাজ উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
তাদের দাবি, বেসরকারী কেন্দ্রগুলি বাতিল করে সরকারী কলেজে পরিক্ষা অনুষ্ঠিত করা হলে সকল অনিয়ম এবং অবৈধ পন্থায় পাশ করা ব্যবস্থা বন্ধ হত। ফলে ক্লিনিক ও ডায়গনিষ্ট সেন্টারগুলি সঠিক মানের ডিপ্লোমা নার্সিং পাশ ছাত্র-ছাত্রী পেতেন তাদের প্রতিষ্ঠানে।
এদিকে, ভারতে টাকা পাচার-সহ যত অভিযোগ উঠেছে নিলুফার উঠেছে। তিনি আওয়ামী লীগের প্রেসিডয়াম সদস্য নানকের সুপারিশে নিয়োগ পান। শর্ত পূরণ ছাড়াই ডেপুটি রেজিস্ট্রর পদে নিয়োগ বাগিয়ে নেওয়া, সরকারি চাকরিতে থেকে নার্সিং ইনস্টিউিট ব্যবসা-সহ নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে বাংলাদেশ নার্সিং ও মিডওয়াইফারি কাউন্সিলের ডেপুটি রেজিস্টার নিলুফার ইয়াসমিনের বিরুদ্ধে। এসব অভিযোগের শুনানির জন্য স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের গঠিত তদন্ত কমিটি নিলুফার ইয়াসমিনকে সচিবালয়ে তলব করেছে। মন্ত্রণালায়ের সিনিয়র সহকারী সচিব শাহ নুসরাত জাহান স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানা গেছে।
জানা যায়, এর আগে গত ১৫ সেপ্টেম্বর ‘বৈষম্যবিরোধী নার্সিং সংস্কার পরিষদ’ বাংলাদেশ নার্সিং ও মিডওয়াইফারি কাউন্সিল এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে নিলুফার ইয়াসমিনের অনিয়ম-দুর্নীতির বিষয়ে লিখিত অভিযোগ দেয়। অভিযোগ পত্রে উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশ নার্সিং ও মিডওয়াইফারি কাউন্সিলের ডেপুটি রেজিস্ট্রার পদ পূরণে ২০১৯ সালে একটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। বিজ্ঞপ্তিতে আবেদনকারীকে কোনো নার্সিং ইনস্টিটিউটে ১৫ বছর শিক্ষকতা এবং প্রশাসনিক কাজের অভিজ্ঞতা থাকার বিষয়ে উল্লেখ করা হয়। তবে নিলুফার ইয়াসমিন নিয়োগের শর্ত পূরণ করতে পারেননি। এমনকি ওই নিয়োগ পরীক্ষায় জান্নাতুল ফেরদৌস নামে একজন প্রার্থী প্রথম হন। রাজনৈতিক প্রভাব দেখিয়ে তাকে নিয়োগ না দিয়ে পুনরায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে নিলুফার ইয়াসমিন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবীর নানকের সুপারিশে নিয়োগ পান।
অভিযোগপত্রে আরও বলা হয়, নিলুফার ইয়াসমিন ঢাকায় ৫টি ফ্ল্যাট, ভারতে বাড়ি এবং একাধিক গাড়ির মালিক। তিনি নিয়মবহিভূতভাবে নতুন নার্সিং কলেজ অনুমোদনের জন্য ২৫ লাখ এবং নবায়নের জন্য ৫ লাখ করে অর্থ নিয়ে থাকেন। এভাবে পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের নামে ব্যাংক একাউন্টে অবৈধভাবে জমানো টাকা ভারতে পাচার করছেন। নিলুফার পদ ও রাজনৈতিক ক্ষমতার অপব্যবহার করে নিয়োগ ও বদলি বাণিজ্য করেছেন। এমনকি কোনো পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই বিভিন্ন ইনস্টিটিউটকে সুবিধা দিয়েছেন। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকায় তার এসব অভিযোগের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। জানা গেছে, জুলাই অভ্যুত্থানের পর তার এ অভিযোগ আমলে নিয়ে তদন্ত কমিটি কাজ করছে। তবে তিনি নানাভাবে কমিটিকে চাপ প্রয়োগের চেষ্টা করছেন। এসব অভিযোগ ও শুনানির বিষয়ে নিলুফার ইয়াসমিনের ব্যক্তিগত মুঠোফোনে একাধিকবার ফোনকল দিলেও তিনি ফোন রিসিভ করেন নি।ফলে তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
অপরদিকে, বাংলাদেশ নার্সিং ও মিডওয়াইফারি কাউন্সিলের (বিএনএমসি) নতুন রেজিস্টার পদে ঢাকা নার্সিং কলেজের অধ্যক্ষ (অবসরপ্রাপ্ত) হালিমা আক্তারকে নিয়োগ দিয়েছে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়। গত (২২ সেপ্টেম্বর) স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের নার্সিং শিক্ষা শাখার সিনিয়র সহকারী সচিব শাহ্ নুসরাত জাহান স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।