চৌদ্দগ্রাম উপজেলার শ্রীপুর ইউনিয়নের চৌমুহনী মুজিবুল হক উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গফুর ফারুক অবসরের এক বছর অতিক্রম হলেও এখনো বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। অবসরের পরে কমিটির রেজুলেশনের মাধ্যমে গত ২ ফেব্রুয়ারী তাকে দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছে এমন দাবি করলেও সরেজমিন বিদ্যালয়ে গিয়ে রেজুলেশন বইতে নিয়োগের কোন প্রমান পাওয়া যায়নি। এ সময় গফুর ফারুক জানান, তার অতিরিক্ত নিয়োগের রেজুলেশন বইটি সাবেক রেলমন্ত্রী মুজিবুল হকের ভাতিজা ইউসুফ বিদ্যালয় থেকে নিয়ে গেছে এবং সম্ভবত মুজিবুল হকের বাসায় আছে বলে জানান তিনি। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার, উপজেলা নির্বাহী অফিসার তাকে দায়িত্ব পালনে নিষেধ এবং ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা আফরোজা বেগমকে দায়িত্ব হস্তান্তরের নির্দেশ দিলেও তার তোয়াক্কা করছেন না তিনি। অনিয়মের মাধ্যমে দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক গফুর ফারুক বিদ্যালয়ের অর্থ আত্মসাৎসহ নানাবিধ অনিয়মের সাথে জড়িত বলেও অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা।
সরেজমিনে চৌমুহনী মুজিবুল হক উচ্চ বিদ্যালয়ে পরিদর্শনে গিয়ে স্কুল সূত্রে জানা যায়, অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক গফুর ফারুক ২০১৯ সালের পহেলা জানুয়ারী বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। চলতি বছরের ৩০ জানুয়ারী বিদ্যালয়ে কাগজপত্রের মাধ্যমে অবসর গ্রহণ করলেও তিনি এখনো প্রধান শিক্ষকের চেয়ার দখল করে আছেন। দায়িত্ব পালনে বৈধতার প্রশ্নে বিদ্যালয়ের সার্বিক উন্নয়নের জন্য সাবেক রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক এবং তাঁর স্ত্রী তাকে অতিরিক্ত ১ বছরের জন্য দায়িত্ব পেয়েছেন দাবি করলেও তার প্রদর্শিত রেজুলেশনের কপির সাথে বিদ্যালয়ে সংরক্ষিত রেজুলেশনের কোন মিল পাওয়া যায়নি। বিদ্যালয়ে রক্ষিত রেজুলেশন বইতে ২০২৩ সালের ২১ নভেম্বর পরিচালনা কমিটির ১ম অধিবেশনের তথ্য উল্লেখ করা হয়। পরবর্তী ২য় অধিবেশন হয় চলতি বছরের ৩ মার্চ। কিন্তু গফুর ফারুক প্রদর্শিত রেজুলেশনের ফটোকপিতে চলতি বছরের ২ ফেব্রুয়ারীর ১৫নং অধিবেশনে দায়িত্ব পেয়েছেন মর্মে কপি প্রদান করেন। রেজুলেশনে উপস্থিত সভ্যগণের নামের তালিকায় ২নং সদস্য সাবেক রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক ও ৩নং সদস্য সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান এবিএম এ বাহারের উপস্থিতি দেখানো হলেও রেজুলেশনে তাদের স্বাক্ষর নাই। বিদ্যালয়ে রক্ষিত রেজুলেশনে উক্ত মিটিংয়ের তথ্য না থাকার প্রশ্নে গফুর ফারুক দাবি করেন, বিদ্যালয়ের আরেকটি রেজুলেশন বই আছে যা সাবেক রেলমন্ত্রীর ভাতিজা ইউসুফ বিদ্যালয় থেকে নিয়ে যান এবং তা সম্ভবত মুজিবুল হকের বাসায় রয়েছে। এ সময় উপস্থিত স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ তার দাবিকে ভুয়া এবং মিথ্যাচার বলে দাবি করেন। রেজুলেশনের মাধ্যমে চলতি বছরের ৩১ জানুয়ারী আফরোজাকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব দিলেও বেতন উত্তোলন ছাড়া বিদ্যালয় পরিচালনার কোন ক্ষমতাই তাকে দেয়া হয়নি বলে জানান আফরোজা।
অভিযুক্ত গফুর ফারুক তার বক্তব্যে বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্ণীতির বিষয় এড়িয়ে গেলেও ৫ আগষ্টের কয়েকদিন আগে রেজুলেশনের বইটি সাবেক রেলমন্ত্রীর ভাতিজা নিয়ে যান বলে জানান। বইটি ঢাকায় রয়েছেন বলেও জানান তিনি। এসময় তিনি বিদ্যালয়ে দায়িত্ব পালনের কথা স্বীকার করে বলেন, সাবেক রেলমন্ত্রীর অনুরোধে বিদ্যালয়ের কাজে সহযোগীতার জন্য তিনি অবস্থান করছেন।
ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা আফরোজা বেগম বলেন, কাগজ কলমে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব দিলেও বেতন উত্তোলন ছাড়া বিদ্যালয় পরিচালনার কোন ক্ষমতাই তাকে দেয়া হয়নি। বিদ্যালয়ের বিভিন্ন ব্যাংকিং হিসাব, আয়-ব্যয় এবং অভ্যন্তরিন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক গফুর ফারুক চৌধুরী পালন করেন।
স্থানীয় সামাজিক ব্যক্তিত্ব ও উপজেলা বিএনপি নেতা আবু তাহের মজুমদার বলেন, গফুর ফারুক জোরপূর্বক ভুয়া রেজুলেশনের মাধ্যমে দায়িত্ব পালন করছেন। ওনি প্রতিষ্ঠানের আর্থিক হিসাবে অনিয়মের পাশাপাশি সাবেক ক্ষমতাসীন সরকারের নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে একাধিক নিয়োগ বানিজ্য করেছেন।
চৌদ্দগ্রাম উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার কে.এম মীর হোসেন জানান, আমরা বিষয়টি অবগত হওয়ার পর অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক গফুর ফারুককে দায়িত্ব পালনে নিষেদ করি এবং সকল দায়-দায়িত্ব ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিতা আফরোজাকে বুঝিয়ে দেয়ার জন্য নির্দেশনা প্রদান করি।
চৌদ্দগ্রাম উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ রহমত উল্লাহ বলেন, অবসরের পরে কোন রেজুলেশনের মাধ্যমে দায়িত্ব পালনের বিষয়ে আমরা অবগত নই। সংশ্লিষ্ট শিক্ষকের দায়িত্ব পালনের বিষয়টি অবগত হওয়ার পর আমি উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট শিক্ষক গফুর ফারুককে দায়িত্ব পালনে নিষেধ করি।